বাংলাকে অসম্মান করবেন না: মমতা :
ডেস্ক রিপোর্ট :
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘দাঁত থাকতে আমরা অনেকে দাঁতের মর্ম বুঝি না। দাঁতের মর্ম বোঝার চেষ্টা করুন। মমতা ব্যানার্জিকে গালাগাল দিতে গিয়ে সরকারকে অপমান, বাংলাকে অসম্মান করবেন না।’ মঙ্গলবার (২১ মে) দলীয় কর্মসূচিতে তিনি কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে এ কথা বলেন। আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে গত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদান পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের কোষাগারের অর্থ দিয়েই ওই তিন প্রকল্পের ‘বঙ্গীয় সংস্করণ’ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই খরচের বহর শুনিয়ে বকেয়া নিয়ে ফের এক বার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন মমতা পাশাপাশি তিনি বলেন, তিনি কোনো জাদুকর নন, যে চাইলেই আকাশ থেকে টাকা পড়বে।সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মমতা। মঙ্গলবার তাঁর সরকারি পরিষেবা প্রদান ও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস কর্মসূচি ছিল জলপাইগুড়িতে। সেই মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, ‘কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। চার বছর ধরে আবাস, সড়ক আর ১০০ দিনের কাজে টাকা দিচ্ছে না। তার মধ্যেও আমরা করছি। আমি ম্যাজিশিয়ান নই যে, উপর থেকে টাকা পড়বে। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার মতো নয়। টাকা আসতে হয় (কেন্দ্র থেকে রাজ্যে)’প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, জুন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। এক লপ্তে সেই টাকা দিতে রাজ্যের আনুমানিক খরচ হতে পারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। সেই আবহে মমতার এই ‘আমি ম্যাজিশিয়ান নই যে, উপর থেকে টাকা পড়বে’ মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। যদিও মমতা ডিএ-এর প্রসঙ্গ একবারও তোলেননি। তবে সোমবার ডিএ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোর্টের কেসের ব্যাপারে আমি কিছু বলি না।’উল্লেখ্য, ডিএ মামলার শুনানিতেই রাজ্যের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সরকারের আর্থিক স্বাস্থ্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। আদালত প্রথমে প্রস্তাবের আকারে বকেয়া ডিএ-র ৫০ শতাংশ দেওয়ার কথা বলেছিল। যার জবাবে সিঙ্ঘভি বলেছিলেন, ৫০ শতাংশ ডিএ মেটাতে গেলে আর্থিক ভাবে রাজ্যের কোমর ভেঙে যাবে। শেষ পর্যন্ত বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, ছ’সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দিতে হবে।মমতা কেন্দ্রের বকেয়া এবং রাজ্যের খরচের তুলনামূলক পরিসংখ্যান দেন মঙ্গলবার। উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ‘‘আজ থেকেই ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ প্রদান শুরু হবে।’’ গত ডিসেম্বরে ওই প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছিল রাজ্য। সেই সময়েই রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। ১২ লক্ষ মানুষকে বাড়ি করে দিতে রাজ্যের খরচ হচ্ছে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি বছর ডিসেম্বরে আরও ১৬ লক্ষ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা যাবে বলে আবার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ যাবে পরের বছর মে মাসে। সব পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে তখন বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে।সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের বণিকমহলকে নিয়ে বাণিজ্য সম্মেলন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল, সম্মেলন তো হল, কিন্তু কত টাকার বিনিয়োগ হল? মঙ্গলবার তাঁদের উদ্দেশে পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, কত বিনিয়োগ হয়েছে বলল না তো! কেন বলব? আপনি কে, যে আপনাকে বলতে হবে? শুধু ডেউচা পাঁচামিতে কত বিনিয়োগ হচ্ছে জানেন?’করব্যবস্থা নিয়েও কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘জিএসটি চালু করেছে। সেখান থেকে রাজ্যের যা প্রাপ্য, সেই টাকা দিচ্ছে না। একই সঙ্গে আবার সড়কে কর নিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর নিচ্ছে। এ সব বন্ধ করতে হবে। যে কোনও একটা নিন।’’ প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং তা পূরণ না-করার প্রসঙ্গ টেনে নাম না-করে বিজেপি-কেও নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যে কথা দিই, সে কথা রাখি। সারা পৃথিবীর মধ্যে আমরাই প্রথম লক্ষ্মীর ভান্ডার চালু করেছিলাম। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশও বলেছিল করবে। কিন্তু করেনি। ওরা কথা রাখে না। আমরা রাখি।’পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবারের কর্মসূচি থেকে মোট দু’লক্ষ মানুষের কাছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশিই একাধিক রাস্তা নতুন করে নির্মাণ, সংস্কার, হাসপাতাল, স্কুল ও কলেজের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেছেন মমতা।গত সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ জন বার্লা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে হাজির ছিলেন তিনিও। বুধবার উত্তরকন্যায় উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা।