বিশ্বের প্রথম গনোরিয়া টিকাদান কর্মসূচি চালু করছে ইংল্যান্ড:
ডেস্ক রিপোর্ট :
বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গনোরিয়া প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। আগামী ১ আগস্ট থেকে দেশটির স্থানীয় যৌনস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু হবে। ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা (এনএইচএস) এই উদ্যোগকে যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘একটি মাইলফলক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে যৌনবাহিত সংক্রমণ, বিশেষ করে গনোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ রোধ করা। ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডে গনোরিয়ার সংক্রমণ ৮৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়, যা ১৯১৮ সাল থেকে সংরক্ষিত পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো— গনোরিয়ার কিছু ধরন এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, যা চিকিৎসা জটিল করে তুলেছে।নতুন করে ব্যবহৃত টিকা ও কার্যকারিতা:এই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত টিকা নতুন নয়—এর নাম 4CMenB, যা মূলত শিশুদের জন্য মেনিনজোকক্কাল ‘বি’ রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার হয়। এই টিকাটির মধ্যে রয়েছে ‘নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস’ ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন, যা গনোরিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ঘনিষ্ঠ জিনগত আত্মীয়।যুক্তরাজ্যের যৌথ টিকাদান ও রোগ প্রতিরোধ কমিটির (JCVI) গবেষণা বলছে, এই টিকা গনোরিয়ার বিরুদ্ধে ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ কার্যকর, যা পুরোপুরি সুরক্ষা না দিলেও সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।কারা পাবেন এই টিকা:শুরুতে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে তাদের এমপক্স, এইচপিভি ও হেপাটাইটিস এ ও বি টিকার প্রস্তাবও দেওয়া হবে।এনএইচএস ইংল্যান্ডের প্রাইমারি কেয়ার ও কমিউনিটি সার্ভিসেসের পরিচালক ড. আমান্ডা ডয়েল বলেন, “এই কর্মসূচি যৌনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বড় অগ্রগতি। এটি গনোরিয়ার বিস্তার রোধে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ প্রতিহত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”প্রতিরোধী সংক্রমণ ও বাড়তে থাকা ঝুঁকি:ইউকেএইচএসএ জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সেফট্রিয়াক্সোন-প্রতিরোধী গনোরিয়ার ১৭টি এবং অতিমাত্রায় ওষুধ প্রতিরোধী (XDR) ৯টি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে—যেখানে এক বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫টি।ইউকেএইচএসএ’র উপপরিচালক ড. সিমা ম্যান্ডাল বলেন, “এই টিকা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেবে না, বরং যুক্তরাজ্যকে গনোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বে নেতৃত্বে নিয়ে আসবে।”যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাশলি ডাল্টন জনগণকে এই টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটি শুধু নিজেকে নয়, অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মতো বৈশ্বিক স্বাস্থ্য হুমকি মোকাবিলায় বড় অবদান রাখবে।”স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে তা ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশে গনোরিয়া প্রতিরোধে পথপ্রদর্শক হতে পারে।