গাজা যখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে, তখন নেতানিয়াহু বলছেন ‘কেউ না খেয়ে নেই’:

ডেস্ক রিপোর্ট :

গাজা উপত্যকা যখন প্রচণ্ডভাবে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজাবাসীর ‘না খেয়ে থাকা’র বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘ অঞ্চলটিকে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে।স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৭ মে) এক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া হাজার হাজার বন্দির ছবি আমাদের সেনাবাহিনী তুলেছে, যাদের মধ্যে একজনকেও দুর্বল বা কৃশকায় দেখা যায়নি। যুদ্ধ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এমন কাউকেই দেখা যায়নি।’তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন থেকেই ইসরায়েল গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে তিনি এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক সতর্কতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যে জানিয়েছে যে, গাজার জনগণ মারাত্মক খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং অনেক শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অঞ্চলটিকে দুর্ভিক্ষপীড়িত ঘোষণা করেছে।নেতানিয়াহুর বক্তব্যে এও স্পষ্ট হয়েছে যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সাথে থাকা সীমান্তগুলো বন্ধ রেখেছে, ফলে খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অঞ্চলটির মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন সোমবার কার্যক্রম শুরু করেছে, যা ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত একটি ত্রাণ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করছে। এই পদক্ষেপ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে, যারা বলছে টেকসই এবং ব্যাপক সহায়তা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।মঙ্গলবার জিএইচএফ পরিচালিত এক সহায়তা কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে ভিড় করা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয় বলে জানিয়েছে গাজার গণমাধ্যম অফিস।২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু ও তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।এছাড়া, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *