ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করুন, না হলে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি নিন: ইরানকে সৌদির হুঁশিয়ারি:

ডেস্ক রিপোর্ট :

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ইরান সফরে গিয়েছিলেন সৌদি রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান। সফরটি ছিল শুধু প্রতীকী নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ। তিনি তেহরানে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের একটি গোপন বার্তা পৌঁছে দেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আলোচনায় গুরুত্ব দিয়ে অংশ নিতে ইরানকে অনুরোধ জানানো হয়।শুক্রবার (৩০ মে) বার্তাসংস্থা রয়টার্স চারটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রিন্স খালিদ ইরানের প্রেসিডেন্ট ভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।সূত্র অনুযায়ী, সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় অল্প সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন। ফলে দ্রুত চুক্তিতে না পৌঁছালে কূটনৈতিক পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের হামলার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করা শ্রেয়।”রয়টার্স জানায়, এই গোপন বার্তার পেছনে সৌদি বাদশাহর মূল উদ্বেগ ছিল আঞ্চলিক অস্থিরতা। গাজা ও লেবাননের সাম্প্রতিক উত্তেজনা, হিজবুল্লাহ ও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অভিযান এবং সিরিয়ায় ইরানের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ায় সংঘাত আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।ইরান এই সফরে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দিলেও, চারটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বৈঠকে ইঙ্গিত দেন যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কমাতে ইরান একটি চুক্তিতে আগ্রহী।প্রসঙ্গত, বর্তমানে ওমানের মধ্যস্থতায় ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু ইস্যুতে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে, যার সর্বশেষটি অনুষ্ঠিত হয় ২৩ মে ইতালির রোমে।তবে আলোচনায় অগ্রগতি হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েই গেছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান সম্পূর্ণভাবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করুক, কিন্তু তেহরান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই তারা কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করবে না।বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও কূটনৈতিক চাপে সৌদি আরব এই সময়টিকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করছে, যাতে নতুন কোনো যুদ্ধ এড়ানো যায়।রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যকার সম্পর্ক বহু বছর শত্রুতাপূর্ণ ছিল। তবে ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে। এবার সেই সম্পর্কের পটভূমিতে, প্রিন্স খালিদের তেহরান সফর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টায় এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *