টানা বৃষ্টিতে যেসব এলাকায় বন্যার শঙ্কা :

ডেস্ক রিপোর্ট:

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বেড়েই চলেছে। মূলতঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ ও পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কারণেই বর্ষা মৌসুমের আগে এমন বৃষ্টি ঝরছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদ-নদীতে বেড়েছে পানি। অনেক স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু স্থানে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভরা বর্ষার আগেই বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে টানা দুই দিন বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকায় টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয় তবে আজ (শনিবার) সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় কিছুটা স্বাভাবিক হতে চলেছে রাজধানীর পরিস্থিতি।ময়মনসিংহে বেড়েছে নদীর পানি-ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আয়মন নদীতে বেড়েছে পানির চাপ। এতে গহুর মোল্লার সেতুর দুই পাশের মাটি ধসে গেছে। গতকাল শুক্রবার (৩০ মে) সকালের ওই ঘটনার পর চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে দুই পারের হাজারো মানুষ। ময়মনসিংহে সেতু ধসে যোগাযোগ বন্ধ: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আয়মন নদীর ওপর নির্মিত গহুর মোল্লা সেতু ধসে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে নদীতে পানি বাড়ার পাশাপাশি সেতুর দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে পাটাতন ধসে পড়ে। এতে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন দুই পাড়ের মানুষ।ময়মনসিংহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, ‘নদী খননের আগে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি সেতু সংরক্ষণ করার জন্য। সেতুর দুই পাশে ৩০ মিটারের মধ্যে আমরা কোনো খননকাজ করিনি। এখন যদি সেতু ভেঙে পড়ে, তাহলে এর দায় আমরা কেন নেব।’শেরপুরে বাড়ছে নদ-নদীর পানি-টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেলার চারটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এর মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার শঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।শেরপুর পাউবো সূত্র বলেছে, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া ভোগাই ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি। ঝিনাইগাতীতে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে।আরও ৩ দিন বাড়বে সিলেটের নদ-নদীর পানি-ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে চেরাপুঞ্জির পানি সিলেটের নদ-নদীতে এসে পড়ছে। এতে প্রায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী তিন দিন এসব নদ-নদীর পানি আরও বাড়বে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে নগরের মদিনা মার্কেট, দরগাহ মহল্লা, পীর মহল্লা, হাউজিং এস্টেট, শিবগঞ্জ, মেন্দিবাগ, রেলগেট, মাছিমপুর, দক্ষিণ সুরমা, মেজরটিলাসহ বেশ কয়েক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।সিলেটের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২৮ দশমিক ২ মিলিমিটার।সিলেট পাউবো জানায়, গতকাল সকাল থেকে সুরমা নদীর দুটি পয়েন্ট, কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্ট, লুবা, সারি, ডাউকি, ধলাই ও সারি-গোয়াইন নদীর একটি করে পয়েন্টে পানি বাড়ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে ২ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪ দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার, সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার, ডাউকি নদীর জাফলং পয়েন্টে ১ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, সারি-গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া লোভা নদীর লোভাছড়া পয়েন্টে ১১ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ও ধলাই নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে ১০ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।কয়রায় বেড়িবাঁধের ৩০০ মিটার নদীগর্ভেপ্রবল পানির তোড়ে খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল ভোরে কয়রার হরিণখোলা গ্রামে পাউবোর বাঁধের পাঁচটি স্থানের ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন হরিণখোলা, ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদ গ্রামসহ উপজেলা সদরের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *