হামজা আসায় ফুটবলের ব্র্যান্ডিংটা অনেক বেড়েছে: ইমরুল হাসান:

ডেস্ক রিপোর্ট :

বিদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা, আন্তর্জাতিক লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আর পেশাদারিত্ব, সব মিলিয়ে নতুন এক প্রত্যয়ের নাম হয়ে উঠছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। একের পর এক প্রবাসী ফুটবলারের আগমনে বদলে যাচ্ছে লাল-সবুজের পরিচিত চেহারা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা দেওয়ান হামজা চৌধুরীর অভিষেকের রেশ না কাটতেই কানাডা লিগ মাতানো শমিত সোম, ইতালি লিগে খেলা ফাহামিদুল হক, আর সঙ্গে আগেই থাকা জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজী—এই পাঁচ প্রবাসী তারকা এক নতুন শক্তি হিসেবে গড়ে তুলছেন বাংলাদেশ দলকে।বাংলাদেশ ফুটবল দলের বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে দারুণ আশাবাদী বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান। সামনে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুর। আগামী ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। ম্যাচটিকে ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান আশা করছেন, মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে চমক দেখাবে লাল-সবুজের দল।ইমরুল হাসান বলেন, ‘শমিতের যে প্রোফাইল, আমাদের দলের জন্য সংযোজন নিঃসন্দেহে একটা বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি, তার অন্তর্ভুক্তিটা বাংলাদেশ জাতীয় দল অনেক শক্তিশালী হবে নিশ্চয়।’ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজাকে অনেক উঁচু মানের ও সমৃদ্ধ খেলোয়াড় মনে করেন ইমরুল হাসান। তবে হামজা একা বাংলাদেশের ফুটবলের মানটা উঁচুতে নিয়ে যেতে পারবেন না। ইমরুলের মতে, তার আশপাশে যারা খেলবেন, তাদের মানসম্মতভাবে তৈরি করতে হবে এবং ফুটবলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে হবে।তিনি আরও বলেন, ‘হামজা আসাতে যেটা হয়েছে, আমাদের ফুটবলের ব্র্যান্ডিংটা অনেক বেড়েছে। এই ব্র্যান্ডিংটার কারণে আমাদের ফুটবলের মার্কেটিং খুব সহজ হচ্ছে। ফলে স্পন্সররা অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কারণ সবকিছুর মূলেই কিন্তু অর্থ। হামজার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় আছে। এটাও আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে শুধু বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে আমাদের ফুটবল র‌্যাংকিংটাকে এগিয়ে নিতে যেতে পারব না। কারণ এমনো সময় হতে পারে যে, দেখা গেল- হামজা ও অন্য যাদের কথা বলছি, তারা এক সময় জাতীয় দলের জন্য অ্যাভেইলেভেল নাও হতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশীয় খেলোয়াড়দের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।’আন্তর্জাতিক মানের দেশি ফুটবলার গড়ে তুলতে কী করা দরকার, সে বিষয়ে মত জানালেন বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি মনে করি যে, জাতীয় পর্যায়ে আমাদের বেশ কিছু বয়সভিত্তিক দল থাকতে হবে। যে ক্লাবগুলো আছে, প্রত্যেকটিতে দলের অন্তত দুই-তিনটি করে বয়সভিত্তিক দল থাকা উচিত। যদি প্রত্যেকটি দল সিরিয়াস হয়, মনে করি যে, আমাদের পাইপলাইনের যে ঘাটতি, সেটি অনেক সমৃদ্ধ হবে। এখান থেকে তারা জাতীয় দলকে অনেক দিন সার্ভিস দিতে পারবে। সঙ্গে বিদেশি খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি করে- এ দুটির সমন্বয়ে আমাদের পক্ষে সম্ভব, সাউথ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়েও আরো বেশি দূর এগিয়ে যাওয়ার।’জাতীয় দলে যুক্ত হয়েছেন হামজা-শমিতরা । তবে তাদের ঘরোয়া ফুটবলে দেখা যাবে কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসান বলেন,‘হামজা চৌধুরী আর শমিতের যে প্রোফাইল এবং পারিশ্রমিক, আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্লাবগুলো তাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে (আর্থিক দিক থেকে)। তাদের আমাদের লোকাল লিগে খেলানোটা কষ্টকরই হবে।’এদিকে সদ্য শেষ হওয়া পেশাদার ফুটবল লিগে তৃতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে বসুন্ধরা কিংস। টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবার প্রত্যাশার ব্যত্যয় ঘটেছে। এই পারফরম্যান্স-পতনের কারণ ব্যাখ্যা করে ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘প্রথম কারণের মধ্যে আছে, আমাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েছে। যাদের সার্ভিস আমরা সারা বছরই পাইনি। যেমন- তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ- এদের কথা বলতে পারি। দ্বিতীয়ত, আমরা যেসব বিদেশি খেলোয়াড়- বিশেষ করে স্ট্রাইকার যাকে এনেছিলাম, সেও ইনজুরিতে পড়ে কাঙ্ক্ষিত নৈপুণ্যটা দেখাতে পারেনি। আমি মনে করি, দেশীয় খেলোয়াড়দের চেয়ে বিদেশিদের অনুপস্থিতি আমাদের বেশি ভুগিয়েছে। সব মিলিয়ে আসলে আমরা লিগ রেসে পিছিয়ে পড়েছি।’তিনি আরো বলেন, ‘সামনের বছরে আমাদের সে লক্ষ্য থাকবে যেন সবকটি শিরোপাই জিততে পারি। তো এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি যে, শেষের দুই-একটি যদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে কোচের মাধ্যমে পুরো দল ছন্দ ফিরে পেয়েছে। এটা কিন্তু আমাদের পজিটিভ দিক। যেটা হয়তো আমাদের পরবর্তী বছরের ক্ষেত্রে দল গঠনে সহায়তা করবে। আমরা আসলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি পরবর্তী বছরের জন্য। আশা করছি, আমাদের সমর্থক যারা আছেন, তারা পরবর্তী বছরে হতাশ হবেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *