১৪ বছর বয়সেই তৈরি যুগান্তকারী অ্যাপ, কয়েক সেকেন্ডেই শনাক্ত করবে হৃদরোগ:
ডেস্ক রিপোর্ট :
স্মার্টফোন ব্যবহার করেই হৃদ্রোগ শনাক্ত করা সম্ভব—এমনই এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাপ উদ্ভাবন করেছেন ১৪ বছর বয়সী সিদ্ধার্থ নন্দ্যালা। অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে শুধু হৃদপিণ্ডের কাছে ফোন ধরতে হয়। তখন ফোনের মাইক্রোফোন হৃদস্পন্দনের শব্দ রেকর্ড করে উন্নত নয়েজ ক্যান্সেলেশন ও অ্যাম্পলিফিকেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে হৃদ্স্বাস্থ্যের সার্বিক মূল্যায়ন দেয়।ভারতে পরীক্ষামূলকভাবে এই অ্যাপের সাহায্যে মাত্র সাত সেকেন্ডেই ৪০ জন হৃদ্রোগীর রোগ শনাক্ত ও প্রাথমিক বিশ্লেষণ করেছেন সিদ্ধার্থ। তিনি চিকিৎসক নন, এমনকি চিকিৎসাশাস্ত্রের শিক্ষার্থীও নন—তবুও অদম্য আগ্রহ আর প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি তৈরি করেছেন Circadian AI নামের এই উদ্ভাবনী অ্যাপ।ছেলেবেলার আগ্রহ থেকেই শুরুটেক্সাসে বসবাসকারী সিদ্ধার্থ ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি, কোডিং ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি আগ্রহী। ২০২২ সালে তিনি মাত্র ১৫০ ডলারে একটি কৃত্রিম হাত তৈরি করেন, যেখানে সাধারণ বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার ডলার। ২০২৩ সালে তিনি ‘STEM It’ নামে একটি স্টার্টআপ গড়ে তোলেন, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের শিক্ষাকিট তৈরি করে।তার উদ্ভাবনের জন্য স্থানীয় ‘ফ্রিসকো চেম্বার অব কমার্স’ তাকে ‘ইনোভেটর অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং দুই হাজার ডলারের অনুদান প্রদান করে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের একটি স্বীকৃতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ থেকেও অভিনন্দন বার্তা পান তিনি।২০২৪ সালে তিনি একটি আর্মব্যান্ড তৈরি করেন, যা ৯৬.১% নির্ভুলতায় প্রবীণদের পড়ে যাওয়া শনাক্ত করতে পারে—এটি কার্যকারিতার দিক থেকে অ্যাপল ওয়াচকেও ছাড়িয়ে যায়।অ্যাপের প্রযুক্তি ও কার্যকারিতাCircadian AI অ্যাপটিতে অত্যাধুনিক শব্দ বিশ্লেষণ ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি হার্টের কাছাকাছি মোবাইল ফোন ধরলেই হৃদস্পন্দনের শব্দ সংগ্রহ করে এবং ক্লাউড-ভিত্তিক এআই মডেল দিয়ে বিশ্লেষণ করে জানায় হার্ট সুস্থ আছে কি না। এর ইন্টারফেস ব্যবহারবান্ধব এবং রোগীর অবস্থা ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করে।অ্যাপটি প্রাথমিক স্ক্রিনিং টুল হিসেবে কাজ করে—হৃদ্স্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, অ্যারিথমিয়া, হার্ট ফেইলিউর, করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং হার্ট ভালভের ত্রুটি শনাক্ত করতে সক্ষম।প্রায় ২০ হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষাযুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫ হাজার এবং ভারতে সাড়ে তিন হাজার রোগীর ওপর অ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। ভারতের গুন্টুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে অ্যাপের মাধ্যমে শনাক্ত রোগগুলো পরে ইসিজি ও ২ডি ইকোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। এতে ৯৬ শতাংশের বেশি নির্ভুলতা পাওয়া গেছে।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতিবর্তমানে সিদ্ধার্থ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের জন্য কাজ করছেন। অনুমোদন পেলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্লিনিক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অ্যাপটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিউ অরলিন্সের লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রোফিজিওলজিস্ট জামিল আহমেদ অ্যাপটির প্রশংসা করে বলেন, “এ ধরনের প্রযুক্তি চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”তবে, তিনি অ্যাপটির নির্ভুলতা ডিভাইসের মাইক্রোফোনের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন। সিদ্ধার্থ এ বিষয়ে বলেন, “এটি কোনো নির্ণায়ক যন্ত্র নয়—এটি একটি প্রাথমিক স্ক্রিনিং টুল, যা ব্যবহারকারীকে জানায় তার হৃদ্স্বাস্থ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা।”
সেখানে থেমে নেই সিদ্ধার্থবর্তমানে তিনি আরও একটি প্রকল্পে কাজ করছেন—এবার লক্ষ্য ফুসফুস। তিনি এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা ফুসফুসের শব্দ বিশ্লেষণ করে নিউমোনিয়া, পালমোনারি এমবোলিজম ও জলধারণের মতো জটিলতাও শনাক্ত করতে পারবে।সিদ্ধার্থ বলেন, “আমার লক্ষ্য শুধু উদ্ভাবন নয়, এমন কিছু তৈরি করা যা কোটি কোটি মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে। আমি এখানেই থামতে চাই না।”