দারুণ লড়েও আটকে গেল মেসি, ব্যর্থ হলো ইন্টার মায়ামি:
ডেস্ক রিপোর্ট :
ফুটবল দুনিয়ায় প্রথমবারের মতো ৩২ দলের অংশগ্রহণে পর্দা উঠেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের। মঞ্চ যুক্তরাষ্ট্র, আলোয় ভাসছে স্টেডিয়াম, আর সেই মঞ্চেই নজর কাড়লেন লিওনেল মেসি। আজ রোববার ( ১৫ জুন) উদ্বোধনী ম্যাচে তার ইন্টার মায়ামির মুখোমুখি হয় মিশরীয় শ্রেষ্ঠ ক্লাব আল-আহলি। ম্যাচজুড়ে ছিল উত্তেজনা, মেসির পায়ের জাদুও ছড়িয়েছিল আলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই গোলরক্ষকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আটকে যায় গোলের খাতা গোলশূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে দুই দলই।ফ্লোরিডার হার্ডরক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় মাঠে গড়ানোর কথা ছিল ইন্টার মায়ামি ও আল-আহলির মধ্যকার ম্যাচটি। তবে আসরের উদ্বোধনী পর্ব ও জমকালো সাংস্কৃতিক আয়োজন ঘিরে কিছুটা বিলম্ব হয়। শুরু থেকেই দুই দলই নামে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে। প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছিল আল-আহলি। কিন্তু মাহমুদ ট্রেজেগুয়েটের নেওয়া পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন মায়ামির আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক অস্কার উস্তারি। দুর্দান্ত সব সেভের কারণে শেষ পর্যন্ত ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই। অবশ্য গোলবারের অন্যপ্রান্তে আহলির গোলরক্ষক মোহামেদ আল এলশেনাওয়িও ছিলেন সমান নৈপুণ্যে—মেসিদের একের পর এক আক্রমণ ফিরিয়ে দিয়েছেন কৃতিত্বের সঙ্গে।ম্যাচের মাত্র ষষ্ঠ মিনিটেই প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করেন আল-আহলির ফরোয়ার্ড আবু আলি। বক্সে ঢুকে শট নিতে দেরি করলে বল জমা পড়ে মায়ামির গোলরক্ষক উস্তারির হাতে। পরে অবশ্য দেখা যায়, তিনি অফসাইডে ছিলেন। এরপর মিনিট কয়েকের মাথায় আবারও মায়ামির রক্ষণে হানা দেন তিনি। এবার ইমাম আশুরের শট ঠেকিয়ে দেন দ্রুত এগিয়ে আসা উস্তারি, যিনি হয়ে ওঠেন আহলির সামনে এক অপ্রতিরোধ্য দেয়াল। একদম সামনে পেয়েও গোলের দেখা পায়নি আফ্রিকান জায়ান্টরা।১৫ মিনিটে একটি ফ্রি-কিক পায় ইন্টার মায়ামি, তবে ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য শটটি মেসি মেরে বসান পোস্টের অনেক বাইরে। ম্যাচজুড়ে দুই দলই আক্রমণে শানিত থাকলেও, বলের দখল ও খেলার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে ছিল আল-আহলি।৩২ মিনিটে এক ফাঁকা হেডার থেকেও অভিজ্ঞ আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মায়ামিকে বাঁচিয়ে দেন। ফলে গোলশূন্য সমতা নিয়েই উভয় দল বিরতিতে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ছিল। তবে নিজেদের বক্সে আহলি ফুটবলারকে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেয় মায়ামি। স্পট কিকে ট্রেজেগুয়েট মায়ামি গোলরক্ষককে বিচলিত করতে পারেননি। বরং বল মেরেছেন তার হাতে। সেই স্বস্তি নিয়ে ফেরার পর মায়ামির ছন্দ ফেরে দ্বিতীয়ার্ধে। মেসিকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তারা বেশ গোছালো ফুটবল খেলতে থাকে। বেশ কয়েকটি সুযোগও তৈরি হয়। ৬৪ মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক একটুর জন্য জালের পাশে গিয়ে লাগে।শেষ পর্যন্ত উভয় দল একের পর এক আক্রমণ শাণায়। গোলের সুযোগ থাকলেও প্রতিবারই দুই গোলরক্ষক দারুণ মুনসিয়ানা দেখিয়েছেন। শেষদিকে মায়ামির কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ফাফা ফিকোল্ট দারুণ হেডে প্রায় আহলির জালে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় সেটি ঠেকিয়ে দেন আহলি গোলরক্ষক। এরপর তিনি আরও দুটি কর্নার থেকে আসা বল আটকান। শেষ পর্যন্ত আর কোনো দল ডেডলক ভাঙতে পারেনি। ফলে স্কোরলাইন ০-০।ক্লাব বিশ্বকাপে এর আগে তিনবার অংশ নিয়ে তিনবারই শিরোপা জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। তবে তখন তিনি ছিলেন বার্সেলোনার হয়ে মাঠে, আর প্রতিযোগিতার পরিসরও ছিল মাত্র সাত দলের সীমিত গণ্ডিতে। এবার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। প্রথমবারের মতো ৩২ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত হচ্ছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, যার পরিধি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুটোই বেড়েছে অনেকগুণ। এই প্রেক্ষাপটে মেসির দল ইন্টার মায়ামির সাম্প্রতিক ফর্মও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে এবারের টুর্নামেন্টে মেসির মূল লক্ষ্য ছিল নিজের সেরাটা তুলে ধরা। দল কতদূর যেতে পারবে, সেই আলোচনা আপাতত দূরে সরিয়ে রেখেছেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।