যেভাবে সর্বদলীয় বৈঠক সম্ভব:
ডেস্ক রিপোর্ট :
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে যদি একটি যৌথ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তাহলে সরকার সেই প্রেক্ষাপটে সর্বদলীয় বৈঠকের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর, কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালান। এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন চলমান অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার (২৩ মে) সংবাদমাধ্যমকে জানান, সরকারপ্রধান তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। পরিস্থিতির সর্বশেষ ওই পর্যায়ে রয়েছে; এখন রাজনৈতিক দলগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন তিনি।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নড়াচড়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ডান ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তারা বর্তমান সরকারপ্রধানের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছে।এদিন রাতেই ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং খেলাফতে মজলিসের নেতারা। বৈঠকে তাঁরা জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গেও মোবাইলে যোগাযোগ করেন।অন্যদিকে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আজ গণতন্ত্র মঞ্চ একটি বৈঠক করবে এবং বিএনপির সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়, সংকট আরও ঘনীভূত হবে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়িয়ে যেকোনো বিষয় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে দূরত্ব ঘোচাতে পারে। নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথনকশা ঘোষণা করলে সংশয় কেটে যাবে।প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।পরে এনসিপির শীর্ষ নেতারা একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বসেন। সেখানে তাঁরা স্বীকার করেন, জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং এ নিয়ে আত্মসমালোচনাও করেন নেতারা।পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিপি। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁরা একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপে বসেন। গতকালও আলোচনা অব্যাহত ছিল। প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গেও বৈঠকে বসার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।এদিকে আজ শনিবার (২৪ মে) সন্ধায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত।প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সন্ধায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জামায়াতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তাঁর পদত্যাগের ইচ্ছা উপদেষ্টা পরিষদে জানালে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ খবরে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করবেন বলেও জানা গেছে।