কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য পশু কেমন হওয়া উচিৎ:
ডেস্ক রিপোর্ট :
আর দুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহায় মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কুরবানি করেন। এ উপলক্ষ্যে সামর্থবান ও বিত্তবানরা কোরবানির পশু কেনার পরিকল্পনা করছেন। সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য এই পশু কুরবানি ওয়াজিব। তবে কুরবানির জন্য কেমন পশু নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কুরবানিতে মুসিন্না ছাড়া জবাই করবে না। তবে সঙ্কটাপন্ন হলে ছয় মাস বয়সি ভেড়া-দুম্বা জবাই করতে পারো। (মুসলিম : ১৯৬৩; আবু দাউদ : ২৭৯৭)আরবি ভাষায় মুসিন্না হলো ৫ বছর বয়সি উট, ২ বছর বয়সি গরু-মহিষ, ১ বছর বয়সি ছাগল-ভেড়া-দুম্বা। (শরহে নববী : ১৯৫৩)সুতরাং উটের ক্ষেত্রে ৫ বছর, গরু-মহিষের ক্ষেত্রে ২ বছর, ভেড়া-দুম্বা ও ছাগলের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১ বছর বয়সি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে ভেড়া-দুম্বা এক বছরের কম হয়েও যদি হৃষ্টপুষ্ট হয় এবং দেখতে ১ বছর বয়সির মতো দেখায় তবে তা দিয়েও কুরবানি চলবে। কুরআনে যেহেতু ‘সবচেয়ে প্রিয় বস্তু’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে তাই কুরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উচিত। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি বড় শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের তরতাজা খাসি দুম্বা কুরবানি করেছেন।’ (ইবনে মাজা : ৩১৫৯)কুরবানির পশু ক্রয়ে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-* দাগ বা ত্রুটি মুক্ত হওয়া:নবী করিম (সা.) বলেছেন, চার ধরনের পশু কোরবানির জন্য অনুপযুক্ত:চোখে স্পষ্ট অন্ধ (এক চোখ বা উভয় চোখে)খুবই অসুস্থখুবই দুর্বল বা লেংড়াশরীরের এমন অংশ নেই, যা স্বাভাবিকভাবে থাকা উচিত (যেমন, কান, লেজ, দাঁত, শিং ইত্যাদি সম্পূর্ণ বা অনেকাংশে না থাকা)অতিরিক্তভাবে, নিচের ত্রুটিগুলো থাকলে পশু অযোগ্য হতে পারে:খুব বেশি কুঁজওলা বা হাড় জিরজিরেকান কাটা বা ছেঁড়া
লেজ পুরো কাটা*সুস্থ ও সতেজ হওয়া জরুরি:পশুটি যেন সুস্থ, সবল ও চঞ্চল হয়। অসুস্থ, জীর্ণ বা হাঁটতে না পারা পশু কোরবানির জন্য অনুপযুক্ত।অবৈধভাবে কাটা বা ট্যাগ দেওয়া না হয়:অনেক সময় পশুর কান বা শরীরে কৃত্রিমভাবে ছেদ বা কাটাকাটি করা হয়, এমন পশুও সন্দেহযুক্ত হতে পারে।কোন প্রাণী কয়জন ভাগ দিতে পারবেন–উট – ৫ জন পর্যন্ত ভাগে কোরবানি করা যায়গরু বা মহিষ – ৭ জন পর্যন্ত ভাগে কোরবানি করা যায়ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা – শুধু ১ জনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়এক হাদিসে এসেছে- হজরত আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে শিংভাঙা ও কান কাটা পশু দ্বারা কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন।’ (তিরমিজি : ১৫০৪; আবু দাউদ : ২৮০৫)হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে কুরবানির পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (তিরমিজি : ১৪৯৮; আবু দাউদ : ২৮০৪)। তবে ত্রুটির ক্ষেত্রে পশুর সব অঙ্গ সমান বিবেচ্য নয়। এমন কিছু ত্রুটি আছে যা একটা স্তর পর্যন্ত ছাড়যোগ্য।যেমন হজরত কাতাদা (রহ.) বলেন, আমি হজরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.)-কে ‘কান কাটা’-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি কানের অর্ধাংশ বা তারচেয়ে বেশি কাটা থাকে তবে তা দ্বারা কুরবানি হবে না।’ (মায়ানিল আসার : ২৭৯; ইলাউস সুনান : ৫৫৮৫)আরেকটি হাসিসে এসেছে, শিং যেহেতু মৌলিক অঙ্গ হিসেবে গণ্য নয় তাই অধিকাংশ শিংভাঙা থাকলেও জায়েজ হবে। তবে গোড়া থেকে উপড়ে গেলে অঙ্গহানী বলে গণ্য হবে। তা দ্বারা কুরবানি হবে না।’