আ.লীগ এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছে সংবিধানের মাধ্যমে: ফরহাদ মজহার
আ.লীগ এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছে সংবিধানের মাধ্যমে: ফরহাদ মজহার:
ডেস্ক রিপোর্ট: অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ফরহাদ মজহার ২৪-এর বিজয়টাকে আমরা ফ্যাসিস্ট সংবিধানের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছি বলে মন্তব্য করেছেন কবি, চিন্তাবিদ, কলামিস্ট ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, `এখনো পূর্ণ বিজয় হয়নি। আওয়ামী লীগ এখনো ক্ষমতায় রয়ে গেছে সংবিধানের মাধ্যমে। তাই ৭২-এর সংবিধানকে বাতিল করে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে।’ বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা কারিগরের আয়োজনে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চোতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষ: রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফরহাদ মজহার বলেন, নতুন গঠনতন্ত্র হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার দাখিল করার জন্য। সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা মানে হলো ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ফরহাদ মজহার বলেন, সমাজ যখনই কোনো উৎসবে অংশগ্রহণ করে, সেটা তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক উপলব্ধিকে শাণিত করে। আর এটা যখনই শাণিত হয়, তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্য হিসেবে সেটা কাজ করে। এই দুটো করতে হলে মতবাদ থেকে আমাদের চিন্তা করতে শিখতে হবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আঁকারে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, দেশে বাঙালি জাতিবাদ নেই? কিন্তু আরেকটা জাতিবাদ আসছে। সেটা হচ্ছে ইসলামী জাতিবাদ- যারা মনে করে মুসলিম জাতি ছাড়া সকলেই আমার শত্রু। তাই বলবো, ইসলামী জাতিবাদের কোনো স্থান নেই। এই জাতিবাদের মধ্যে ঢুকলে আমরা বাঙালি ও ইসলামী জাতিবাদের মধ্যে একটা গৃহযুদ্ধে পড়ে যাবো। তাই আমি আপনাদের সতর্ক হতে বলছি। এই বয়সে সবাইকে সাবধান করে যাচ্ছি। দেশকে বিভক্ত করবেন না। ভাববেন না যে, বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনা এখন নেই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় নেই— চলে গেছে- তাই আমাদের বাঙালি জাতিবাদ চলে গেছে- এটা ভুল ধারণা। তাই আমাদের কথা বলতে হবে, মতবাদ পরিত্যাগ করতে হবে। মতবাদ পরিত্যাগ করে আমাদের বুঝতে হবে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য আমরা লড়াই করেছি। এই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, সেই লড়াইয়ে যেটা পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের শোনেনি। তারা আমাদের ৭১-এ ঘৃণ্য একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। তারা হত্যাকাণ্ড করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ৭১-কে যদি আমরা মুছে দিতে চাই, এটা মারাত্ম ভুল করবো। এবং যদি মুছে দিতে না চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি এটা আমার সংস্কৃতি।’ তিনি বলেন, ‘তাই আপনি যে পন্থীর লোক হন না কেন, ৭১ নিয়ে কোনো দেনদরবার চলবে না। ৭১ আমার ইতিহাসের অংশ। আমি বাংলা ভাষী, বাংলা আমার সংস্কৃতি এবং একইসঙ্গে ইসলাম আমার ধর্ম। যেমন আমাকে ইসলাম থেকে আপনারা বঞ্চিত করতে পারবে না। আমার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকেও বঞ্চিত করতে পারবেন না। দয়া করে এই বিভাজন আর রাখবেন না। এই বিভাজন যদি রাখেন আমরা আরেকবার গৃহযুদ্ধের মধ্যে চলে যাবো। এই যুদ্ধে যদি জড়াতে চাই, তাহলে আমাকে শিক্ষা লাগবে, স্বাধীনতা লাগবে। যারা অতীতে ভুল করেছে, তাদের ভুলটা যদি তারা স্বীকার করে, তাদের যদি অনুশোচনা আসে, এই ভুল যদি কাটিয়ে উঠতে চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে, ৭১-এ আমরা ভুল করি নাই।’ ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘২৪-এর আন্দোলনের এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্প একটু বাদ পড়েছে। পূর্ণ বিজয় হয়নি। কারণ আমরা এই বিজয়টাকে ঢুকিয়ে ফেলেছি ফ্যাসিস্ট সংবিধানে। আমরা আবারও ঢুকিয়ে ফেললাম পুরনো সংবিধানে। আমরা একটা নতুন সরকার গঠন করলাম, পুরনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। আমরা আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ এখনো সেই ৭২-এর সংবিধানে রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ছাত্ররা যখন একটি নতুন ঘোষণা দিতে চেয়েছে। সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেন নাই ড. ইউনূস। এটা তিনি ঠিক করেন নাই। দেরি হওয়ার আগেই আপনি (ড. ইউনুস) অবশ্যই যে ঘোষণা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন, সেই ঘোষণা দিতে হবে।’ আগামী দিনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্বকে প্রধান গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে তিনি এ সময় বলেন, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে কাজ করলে বিরোধ আর বিভাজন দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। তাই অপূর্ণতা আর বিরোধ মীমাংসা করে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যেতে হবে। পরে একক বক্তৃতা শেষে উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ফরহাদ মজহার। অনুষ্ঠানে কারিগরের নির্বাহী পরিচালক সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় লেখক গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।