এলডিসি উত্তরণ ও পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এখন আমাদের বড় লক্ষ্য
এলডিসি উত্তরণ ও পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এখন আমাদের বড় লক্ষ্য:
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নযনশীল দেশের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হবে। উন্নযনশীল দেশের মর্যাদা লাভ নিশ্চয় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে আরও সমুন্নত করবে। তবে, সেইসঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের সামনে উপস্থিত হবে বড় রকমের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সময়োপযোগী প্রস্তুতি গ্রহণ করা এখন বাংলাদেশের সামনে অন্যতম একটি বড় লক্ষ্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি রফতানি নির্ভর প্রবৃদ্ধি। এলডিসি থেকে বের হওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় চীন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়ে আসছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালে এলডিসি তালিক থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের জন্য এসব শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা পায়। জাতিসংঘ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে মূলত উন্নয়নশীল ও উন্নত, এই দুই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করে। স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত দেশ প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে থাকা দেশ। পিছিয়ে থাকা দেশগুলো যাতে এগিয়ে যেতে পারে এবং নিজেদের উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়, তার জন্য উন্নত দেশগুলো এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, ছোট দ্বীপপুঞ্জ, ভূ-বেষ্টিত দেশ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ কোনো একটি দেশকে এলডিসি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। জনসংখ্যা ও স্বল্প অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালে এলডিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানসহ বিশ্বে মোট ৪৪টি স্বল্পোন্নত দেশে রয়েছে। বিগত পাঁচ দশকে দক্ষিণ এশিয়ার ভুটান ও মালদ্বীপসহ বিশ্বের মোট আটটি দেশ এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস এলডিসি থেকে উত্তরণের তালিকায় আছে। একটি দেশে এলডিসি থেকে উত্তরণের সক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা, তিনটি সূচক অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে তা নির্ণয় করা হয়। সূচক তিনটি হলো : মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি। যেকোনো দুটি সূচকে উত্তীর্ণ হলে কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ হলে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে বলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সুপারিশ করে। বাংলাদেশ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিডিপির ২০তম অধিবেশনের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে প্রথমবারের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের মাপকাঠি অর্থাৎ তিনটি সূচকেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এরপর ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সিডিপির ২৩তম অধিবেশনের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের লক্ষ্যমাত্রাই অর্জন করতে সক্ষম হয়। টানা দুটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে সকল সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সিডিপি বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক) বরাবর সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠায়। এলডিসি উত্তরণ নীতিমালা অনুযায়ী ইকোসক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রতিবেদন পাঠায়। সাধারণ পরিষদ ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর করোনা মহামারির কারণে পাঁচ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় দিয়ে এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত ইকোসকের প্রতিবেদন রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদন করে। বিভিন্ন যাচাই-বাছাই পেরিয়ে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে এলে বাংলাদেশ হবে তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ হয়ে এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসা প্রথম দেশ। সর্বশেষ হিসেবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার, যা উত্তরণের মানদণ্ড অনুযায়ী যথেষ্ট সন্তোষজনক। এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্টের ওপরে থাকতে হয়, সেখানে বাংলাদেশ পেয়েছে ৭৭.৩ পয়েন্ট। সুতরাং মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল ধরা চলে। এলডিসি থেকে উত্তরণের অন্যতম একটি শর্ত হলো অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি সূচকে ৩৩ পয়েন্টের নিচে অবস্থান করা। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মোটামুটি অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়ে টানা তিনটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে সাফল্যের সঙ্গে এ সূচকে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ২৬.৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ যখন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিডিপির ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে প্রথমবারের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের মাপকাঠি অর্থাৎ তিনটি সূচকেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশ্ব অর্থনীতির চিত্র ছিল অনেকটা আলাদা। কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সংঘাত, মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব, সাপ্লাই-চেইনের নতুন বিন্যাস এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পালটে গেছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সময়োপযোগী প্রস্তুতি গ্রহণ করা এখন বাংলাদেশের সামনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য। এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশের রফতানি খাত। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ যে সকল শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পায়, ২০২৬ সালে সেসব সুবিধা বন্ধ হলে রফতানি নির্ভর শিল্প, বিশেত তৈরি পোষাক (রেডি-মেড গার্মেন্টস) শিল্প ঝুঁকিতে পড়বে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে প্রকাশিত ‘এডিবি ব্রিফ-২৯৩ মার্চ ২০২৪’ অনুযায়ী এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে রফতানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হলে বাংলাদেশের রফতানি ৫.৫ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে আশার বিষয় হলো ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর বিশেষ সভায় এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের পরও সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানকে মেধাস্বত্ব বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য নয়। যে সুবিধার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারে, এলডিসি থেকে বের হলে ওষুধশিল্পের ওপর মেধাস্বত্ব বিধিবিধান কড়াকড়িভাবে প্রযোজ্য হবে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি হয়েছে, যা দেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সংকট এবং সম্ভাবনার দরজা মেলে ধরেছে। এলসিডি থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে অন্যতম এক বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনা, আর্থিক ব্যবস্থাসহ প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং সামাজিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা নির্ধারিত সময়ে এলসিডি থেকে উত্তরণ এবং উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ভীষণ জরুরি। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অপর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহ, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, ডলার সংকট, রফতানি হ্রাস এবং মন্থর প্রবৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। অর্থনীতিতে নিম্নগতির ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরের চলন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি–জুন) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০.৭৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৯২ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে রফতানি খাত। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়লেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বিদেশি অনুদান এবং মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে যাওয়ার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে নিট প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (নিট এফডিআই) এসেছিল ৯০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মাত্র ২৫ কোটি ডলার নিট এফডিআই এসেছে। সে হিসাবে এ সাত মাসে নিট এফডিআই প্রবাহ কমেছে ৬৫ কোটি ডলার। এফডিআইয়ের পাশাপাশি এ সময়ে বিদেশি অনুদানও হ্রাস পেয়েছে ১২২ কোটি ডলারের বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)পূর্বাভাসে উল্লিখিত হয়েছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জলবায়ুর মন্দ প্রভাব এবং সংকোচনমূলক অর্থনৈতিক নীতির ফলে ২০২৫ অর্থবছরে আমাদের জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ঘটবে মাত্র ৩.৮ শতাংশ। দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নীতকরণ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। ইতিবাচক এবং দৃঢ় অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস বেসরকারি খাত। মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং অনানুষ্ঠানিক খাত বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিরাট অংশ অনানুষ্ঠানিক। সেই বিবেচনা থেকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংকোচনমূলক নীতির বিপরীত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল হলে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। দেশে এবং বিদেশে আস্থা বাড়ানোর জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার দিকে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে নীতিসুদ বাড়ানোর কারণে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতি মন্থর করে দিতে পারে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সামনের দিনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালী করা দরকার। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং বাণিজ্য সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধানের রাস্তা তৈরি করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।