মুহূর্তেই ধসে পড়ে তিন মসজিদ, মারা যান জুমাতুল বিদায় আসা শত শত মুসল্লি
মুহূর্তেই ধসে পড়ে তিন মসজিদ, মারা যান জুমাতুল বিদায় আসা শত শত মুসল্লি:
ডেস্ক রিপোর্ট:
গত শুক্রবার রমজানের শেষ জুমার নামাজের জন্য মিয়ানমারের সাগাইং শহরের শত শত মুসল্লি মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন। ঈদের আনন্দের আগে এটাই ছিল তাদের শেষ জুমা। কিন্তু দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে (স্থানীয় সময়) এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো এলাকা কাঁপিয়ে তোলে। মুহূর্তের মধ্যেই তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ মিয়োমা পুরোপুরি ভেঙে যায়। মসজিদের ভেতরে যারা ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই মারা যান। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তবে উদ্ধারকাজ চলার কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সাগাইংয়ের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল মিয়োমা স্ট্রিট, যেখানে একাধিক মসজিদ অবস্থিত। দেশটির সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, শুধু মসজিদের ভেতরেই প্রায় ৫০০ জন মুসল্লি মারা গেছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। অনেকেই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন, কারণ তাদের বাড়িঘর ধসে পড়েছে বা নতুন কোনো ভূমিকম্পের আশঙ্কায় তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। মিয়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সো নে উ এখন থাইল্যান্ডের মায় সোত শহরে বসবাস করেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি জানতে পারেন তার পরিবার, বন্ধু ও সাবেক মসজিদের প্রায় ১৭০ জন মানুষ মারা গেছেন। ‘আমি যখন তাদের কথা ভাবি, বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা, তখন আমি কান্না থামাতে পারি না,’ বললেন তিনি। তার স্ত্রী’র প্রিয় এক আত্মীয় মারা গেছেন। তার কথায়, ‘এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত।’ মৃতদেহ দাফন করাও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাগাইংয়ের মুসলিম কবরস্থান কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে, কারণ এটি প্রতিরোধ বাহিনীর (PDF) নিয়ন্ত্রিত এলাকার পাশে অবস্থিত। এই কারণে মৃতদেহগুলো মাণ্ডালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা ইরাওয়াদি নদীর ওপারে অবস্থিত। অনেকে ইসলামী রীতি অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রিয়জনদের দাফন করতেও পারছেন না। সো নে উ বলেন, ‘একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, নিজের পরিবারের সদস্যদের নিজ হাতে দাফন করতে না পারা।’
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারেরও বেশি মুসলিম পরিবার এখন সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকে রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিন পার করছেন।
ভবিষ্যতে কী হবে, তা কেউ জানে না। কিন্তু যারা বেঁচে আছেন, তারা এখনো শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, অপেক্ষা করছেন আরও সাহায্যের জন্য।