সাকিবের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি বিশ্বাসঘাতকতা: প্রেস সচিব

খেলা ১৭ এপ্র ২০২৫

সাকিবের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি বিশ্বাসঘাতকতা: প্রেস সচিব:

ডেস্ক রিপোর্ট: সাকিবের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শুধু ভুল নয়, এটি ছিল নৈতিক বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন, সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। যে কোনো নাগরিকের মতে তাঁরও অধিকার আছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার বা রাজনৈতিক জীবন বেছে নেওয়ার। কিন্তু প্রশ্নটা তাঁর রাজনীতিতে যোগ দেওয়াতে নয়—প্রশ্নটা হলো, তিনি কাদের পাশে দাঁড়ালেন। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যখন তিনি যুক্ত হলেন, তখন দলটি আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের মুখে ছিল। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—গণহত্যা, গুম, বেআইনি গ্রেপ্তার, বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ক্রসফায়ারে হত্যা, দুর্নীতির মহোৎসব এবং এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুটের ঘটনাও। এমন পরিস্থিতিতে এই দলে যোগ দেওয়া কোনো সাধারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি ছিল একটি সরকারের পাশ দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত, যে সরকার নিজ দেশের জনগণের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য জাতিসংঘের তদন্তের আওতায় এসেছে। তিনি আরও লেখেন, বিশ্বের আর কোনো বড়মাপের ক্রীড়াবিদের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি স্বেচ্ছায় এমন একটি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যার বিরুদ্ধে এত ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে—বিশেষ করে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে। সাকিবের এই সিদ্ধান্তকে সহজভাবে ভুল বলা যায় না—এটি হয় গভীর রাজনৈতিক বোধের অভাব, নয়তো আরও খারাপ কিছু—ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য সুযোগ নেওয়া। আরও উদ্বেগজনক বিষয় জানিয়ে প্রেস সচিব লেখেন, সাকিবের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে মনে হচ্ছে কোনও পেশাদার জনসংযোগ বা ইমেজ ম্যানেজমেন্ট পরামর্শের ছোঁয়াও ছিল না। অথচ তাঁর মতো একজন আন্তর্জাতিক তারকার জন্য শীর্ষস্থানীয় পিআর এজেন্সির সেবা গ্রহণ করা মোটেই কঠিন ছিল না। তাঁর ক্যারিয়ারের আয়ের পরিমাণ এ ধরনের পরামর্শ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক হলো—তাঁর নীরবতা। মাগুরায়, তাঁর নিজের এলাকা, সরকারের সমর্থকদের দ্বারা বিরোধীদের ওপর সহিংসতা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবুও সাকিব একটিবারও মুখ খোলেননি। কোনো নিন্দা জানাননি, কোনো বিচার দাবি করেননি, এমনকি কোনো অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি। এই নীরবতা শুধু হতাশাজনক নয়—এটি ছিল বিস্ময়কর। প্রেস সচিব লেখেনম, সাকিব হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়, কিন্তু প্রতিভা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় না। তিনি জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করেছেন বলেই তাঁর নৈতিক দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যখন একজন ক্রীড়াবিদ একটি সরকারের পাশে দাঁড়ান, যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগ এনেছে, তখন তিনি সেই ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের সঙ্গী হয়ে যান। এছাড়া তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, বিতর্কিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ— শুধু ব্যক্তিগত লাভের ইঙ্গিত দেয়। শেষে তিনি লেখেন, একদিন হয়তো সাকিবকে ফিরে আসতে হবে, মুখোমুখি হতে হবে তাঁর সিদ্ধান্তের পরিণতির। তখন হয়তো তিনি উপলব্ধি করবেন—এই সিদ্ধান্ত শুধু রাজনৈতিক ভুল ছিল না, এটি ছিল বিশ্বাসঘাতকতা।

ট্যাগ