তীব্র গন্ধে মাথা ধরে যায়, জানুন কারণ ও প্রতিকার

১৭ এপ্র ২০২৫

তীব্র গন্ধে মাথা ধরে যায়, জানুন কারণ ও প্রতিকার:

ডেস্ক রিপোর্ট: গরমকাল হোক বা শীতকাল, আমরা অনেকেই প্রয়োজনে বা ভালো লাগার কারণে সুগন্ধি বা ডিওডোরেন্ট অথবা আতর ব্যবহার করে থাকি। মূলত শরীরের দূর্গন্ধ ঢাকতে এ ধরনের প্রসাধনী সবাই ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব প্রসাধনীর মধ্যে কিছুগুলোর রয়েছে কড়া গন্ধ। যা শুকলে মাথা ধরে যায় অনেকের। কেন এমন হয়? কী বলছে বিজ্ঞান? বৈজ্ঞানিক মতে, অনেকেরই কড়া সুগন্ধি বা পারফিউমে মাথা ধরে যেতে পারে এবং বেশিরভাগ সময়েই এটা তেমন বিপদের লক্ষণ নয় — বরং একে গন্ধ-সংবেদনশীলতা (fragrance sensitivity) বা গন্ধ অ্যালার্জি বলা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। নিচে সম্ভাব্য কারণগুলো দেওয়া হলো: কারণ: অসমোফোবিয়া ও মাইগ্রেন: গন্ধ সহ্য করতে না পারার সমস্যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অসমোফোবিয়া। কেউ কেউ তীব্র গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। বিশেষ করে, যাদের মাইগ্রেন আছে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেকটাই বেশি। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ মাইগ্রেন রোগী তীব্র গন্ধে মাথা ধরার সমস্যায় ভোগেন। তামাকের গন্ধ, গাড়ির ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করার রাসায়নিকের গন্ধ ও সুগন্ধির কড়া সুবাস থেকে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। অ্যালার্জি বা সেন্সিটিভিটি: সুগন্ধিতে থাকা কেমিক্যাল শরীরের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে — মাথাব্যথা, বমিভাব বা ক্লান্তি হতে পারে। সাইনাসের সমস্যা: যে যে রাসায়নিক পদার্থ ঘ্রাণের অনুভূতি তৈরি করে, সেগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘অরড্যান্ট’। এই উপাদানগুলি কখনও কখনও সাইনাসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে সুগন্ধিতে যদি ধোঁয়া, আতর ও ক্লোরিন মিশে থাকে, তবে এই সমস্যার ঝুঁকি আরও বেশি। নাসিকাগহ্বরের ভিতর যে মিউকাসের আস্তরণ থাকে, সেই স্তরে বাহ্যিক হরেক রকমের উপাদান আটকা পড়ে যায়। এই স্তরে যদি অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান জমা হয় তবে শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে মাথা যন্ত্রণাও। সতর্কতা: মাথা ধরার সঙ্গে চোখ লাল হওয়া, নিঃশ্বাসে কষ্ট, গা ঘামা বা বুকে চাপ অনুভব করলে। বারবার একইভাবে প্রতিক্রিয়া হলে, সেটা অ্যালার্জির ইঙ্গিত হতে পারে। যদি মনে হয়, সমস্যা দিনে দিনে বাড়ছে বা অন্য গন্ধেও এমন হচ্ছে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। করণীয়: কড়া সুগন্ধি বা এর মতো গন্ধযুক্ত জায়গা এড়িয়ে চলুন। হালকা, অ্যালার্জেন-মুক্ত (fragrance-free) প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। মাইগ্রেন থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করুন। তীব্র গন্ধে মাথাব্যথা হলে ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায় আছে যা সঙ্গে সঙ্গে আরাম দিতে পারে। নিচে সহজ কিছু উপায় দেওয়া হলো: উপায়: ১. পুদিনা তেল বা মেন্থল অয়েল: কপালে, কানের পাশে বা ঘাড়ের পেছনে কয়েক ফোঁটা মেখে হালকা মালিশ করুন। ঠাণ্ডা অনুভূতি মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ২. লেবু ও পানির গন্ধ শ্বাস নিন: লেবুর টুকরো পানিতে দিয়ে রেখে কিছুক্ষণ ঘ্রাণ নিন। এটি মাথা ঠান্ডা করতে সাহায্য করে এবং গন্ধের প্রভাব কমায়। ৩. ভালোভাবে পানি পান করুন: কখনো কখনো গন্ধে মাথাব্যথার পেছনে ডিহাইড্রেশনও থাকতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ৪. তুলসী বা আদা চা: তুলসী পাতা বা আদা দিয়ে গরম চা খেলে মাথাব্যথা অনেকটা হালকা হয়ে যায়। ৫. অন্ধকার ও শান্ত জায়গায় বিশ্রাম: গন্ধযুক্ত স্থান থেকে দূরে গিয়ে অন্ধকার ঠান্ডা ঘরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন, এতে স্নায়ু শান্ত হয়। ৬. গভীর শ্বাস (Deep Breathing): ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন, মুখ দিয়ে ছাড়ুন — এতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে ও মাথাব্যথা কমে। ৭. লবণ পানির গার্গল (যদি সাইনাস থেকে হয়): হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে গার্গল করলে সাইনাসের চাপ কিছুটা কমে যেতে পারে। ৭. কেউ কেউ লবঙ্গ বা এলাচ চিবিয়ে সাময়িক আরাম পান। কিছু নির্দিষ্ট গন্ধ নির্দিষ্ট সঙ্কেত পাঠায় মস্তিষ্কে। কখনও কখনও কোনও গন্ধের সঙ্গে যদি খারাপ কোনও স্মৃতি জড়িয়ে থাকে তবে, সেই গন্ধ নাকে গেলে মস্তিষ্ক সেই সব খারাপ স্মৃতি নিয়ে নড়াচড়া করতে শুরু করে। বাড়ে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ। উদ্বেগ থেকে মাথার পিছন দিকে ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।