ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বিপাকে আসিয়ান, চীনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে
ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে বিপাকে আসিয়ান, চীনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে:
ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যিক খামখেয়ালিপনার প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান অর্থনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং চীনের ওপর বড় ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো এখন নিজেদের সুরক্ষায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তির দিকে ঝুঁকছে। এতে জোটের ভেতরে বিদ্যমান বিভাজন এবং দুর্বল সম্মিলিত প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা দুই দেশকেই বড় ক্ষতির মুখে ফেলে। তবে হঠাৎ করেই এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। চীনের বাইরে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর জন্য ১০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণ করা হলেও, চীনা পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সাময়িক শুল্ক বিরতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, অর্থনৈতিক অস্থিরতার হুমকি এখনও বিদ্যমান। মনে করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসগুলোতে আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় নামবে অথবা অর্থনীতিকে এমনভাবে বৈচিত্র্যময় করতে হবে, যাতে তারা চীনের ওপর আরও নির্ভর করতে বাধ্য হয়। আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি মালয়েশিয়া ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ঐক্যের ডাক দিলেও, বাস্তবে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম একটি শক্তিশালী সম্মিলিত অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৈষম্য জোটকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে। ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করেছে এবং আমেরিকান পণ্যে শুল্ক শূন্য করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো তা প্রত্যাখ্যান করে ভিয়েতনামকে চীনা পণ্যের পুনঃরপ্তানির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। আইএসইএএস-ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ জয়ন্ত মেনন মনে করেন, এই তিন মাসের বিরতি কিছু দেশের জন্য বিকল্প বাজার খোঁজার সুযোগ তৈরি করবে, কিন্তু ট্রাম্পের নীতির আসল ভুক্তভোগী হবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ। হাওয়াইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক আলেকজান্ডার ভুভিং বলেন, “আসিয়ান ট্রাম্পের দাবি মেটানোর মতো অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাখে না,” এবং যদি এই শুল্ক নীতি বাস্তবায়িত হয়, তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যাবে। থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থিতিনান পংসুধিরাক মনে করেন, আসিয়ানের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া শুরু থেকেই দুর্বল হতে পারে। কারণ ব্রুনাই, লাওস ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোর অর্থনীতি ছোট হওয়ায় তারা ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। তবে ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে এবং তাদের পক্ষ থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ভিয়েতনামের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করে দেশটির বিরুদ্ধে চীনের পণ্যকে নিজেদের বলে চালানোর অভিযোগ এনেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসিয়ানের অনেক দেশ, বিশেষ করে কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার ও এমনকি মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত বাণিজ্য নীতির কারণে চীনের দিকে আরও ঝুঁকবে। কারণ চীন বর্তমানে আসিয়ানের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভিত্তিতে এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করছে।